বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:আওয়ামী লীগকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির ধারণা, আওয়ামীলীগ ভোটে আসতে পারে। যদিও রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা রয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনের আগে নিজের ঘর মজবুত করছে। তৃণমূল থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। এর আগেই দল ও অঙ্গসংগঠনকে শক্তিশালী রূপ দেবে, যাতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ব্যাপকভাবে পরাজিত করে মাঠ থেকে দূরে রাখা যায়।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নিষিদ্ধের আলোচনা সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে, নিষিদ্ধের কথা বললে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই তাদের বক্তৃতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নিষিদ্ধ চায় না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে বিএনপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। যদিও বিএনপি বলছে, এসব সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় করতে হলে জনগণের ভোটের মাধ্যমে করতে হবে। অন্য কোনোভাবে করতে গেলে এগুলো টিকে থাকে না। সুফল বয়ে আনে না। ফ্যাসিস্টকে ক্যান্সেল করতে হবে ভোটের মাধ্যমে চরমভাবে পরাজিত করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ১০টি সাংগঠনিক টিম করেছে। ইতিমধ্যে তারা বিভাগওয়ারি কাজ শুরু করছেন। তৃণমূল থেকে কাউন্সিল শুরু হবে। আগামী বছর কেন্দ্রের কাউন্সিল করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলটি এবার সম্মেলনের মাধ্যমে সারা দেশে তৃণমূলের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে চায়। সেই লক্ষ্যে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তৃণমূলের সব কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলটি। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে-ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌর, থানা কমিটি থেকে শুরু করে মহানগর ও জেলা কমিটি সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন শেষ করতে হবে। বিএনপির হাইকমান্ডের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।
দলীয় সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আন্দোলন-কর্মসূচির চাপ না থাকলেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে হাইকমান্ড। সে জন্য বিভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। তৃণমূলে ব্যাপকভাবে ধানের শীষের প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে কর্মিসভা ও বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংগঠন গোছানোর কাজগুলো নিজেই তদারকি করছেন।
সূত্র জানায়, সারা দেশে তৃণমূল পুনর্গঠনে বিএনপির সাংগঠনিক ১০ বিভাগে ১০ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের কাছে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সিলেট বিভাগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বরিশাল বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, রংপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, ফরিদপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করার মিশনে নেমেছি। বিগত সরকারের আমলে ইচ্ছে সত্ত্বেও অনেক কাজ করতে পারিনি। সরকারের বাধার কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। এখন সময় এসেছে। আমি রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছি। সেখানে সংগঠনের সমস্যা ঘাটতি নিয়ে কাজ করছি। এসব কাজ শেষ করতে হবে তিন মাসের মধ্যে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সময়ের আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন পতিত দল। তাদের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের সবাই নিখোঁজ। অনেকে পালিয়ে ভারত বসে আছে। আপাতত দৃষ্টিতে তারা রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী করবে। মাঠে এলে বোঝা যাবে কতটা শক্তি-সামর্থ্য তাদের আছে। তখন আমরা তাদের প্রতিপক্ষ ভেবে প্রস্তুতি নেব। এখন আওয়ামী লীগ কার্যত বায়বীয় সংগঠন। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের আগেই ছিল; কিন্তু নির্বাচন হয়েছিল একতরফা। সুতরাং আগের প্রস্তুতির সঙ্গে বর্তমানেও ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হলেও আমাদের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি থাকবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক সময়ের আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ আসবে কি আসবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। অন্তর্বর্তী সরকার কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কি না সেটাও তাদের বিষয়। বিএনপি আগেই বলেছে, কোনো দল নিষিদ্ধ ও তাদের নির্বাচনের বিষয়ে কোনো অবস্থান নেই আমাদের। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ কী হবে। আওয়ামী লীগ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। নির্বাচনমুখী দল হিসেবে আমরা সব সময় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আছি। যারা দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের চিন্তা আছে আমাদের।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা প্রতিদিন মাঠে কাজ করছি। হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক সবাই নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সময়ের আলোকে বলেন, আমরা যা কিছু করছি সবই নির্বাচন ঘিরে। প্রস্তুতির অংশ বলা যায়। তবে মূল প্রস্তুতি শুরু হবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর। আর আওয়ামী লীগ ১৫ বছর যে দুঃশাসন চালিয়েছে সে জন্য তারা গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এরপরও যদি নির্বাচনে আসে জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান টুকু সময়ের আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের বিষয়ে আমরা বলতে যাব কেন? এটা সরকারের বিষয়। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নির্বাচনমুখী দল। দ্রুত নির্বাচন চাই। প্রস্তুতি আমাদের পর্যাপ্ত। এখন পুরোদমে কাজ চলছে।